নিজস্ব প্রতিবেদক : সরকার মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষনা করার পরেও গাজীপুর সদরের ২৫ নং ওয়ার্ড পূর্ব ভুরুলিয়া এলাকার শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী শামীম রয়েছে এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,বরিশালের কোন এক অজপাড়া গায়ের ছেলে এই ইয়াবা শামীম।
প্রায় ১২ বছর আগে পূর্ব ভুরুলিয়া এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা মাহাবুবের মেয়ে রুপার সাথে বিয়ের একটি অনুষ্ঠানে পরিচয়। অতঃপর প্রেম ভালবাসা, একপর্যায়ে পালিয়ে বিয়ে করেন শামীম-রুপা দম্পতি। বিয়ের পর অভাবের তাড়নায় কোথাও কোন জায়গা না পেয়ে শেষ পর্যন্ত শ্বশুর বাড়িতে ঘর জামাই হিসেবে স্থান পায় শামীম।
বিয়ের পর পরই সংসার জীবনের ঘানি টানতে গাজীপুরের একটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করেন ৭ বছর। চাকুরী করে যে টাকা বেতন পেতেন সে টাকায় সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয় শামীমকে। অভাব-অনটনের সংসারের ইতি টানতে এবং উচ্চাবিলাসী জীবনযাপনের লালসায় সখ্যতা গড়ে তুলেন তারই নিকট আত্মীয় বেয়াই, একাধিক মাদক মামলার আসামী, শহরের শ্বশানঘাট এলাকার ইয়াবা ব্যবসায়ীদের অন্যতম হোতা, চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী আব্দুল আজিজের সঙ্গে। তারপর তিনি অল্প দিনে অধিক টাকার লোভ-লালসা পড়ে, এক পর্যায়ে বেছে নেন নিষিদ্ধ ইয়াবা ব্যবসা। শ্বশুর বাড়িতে বসবাস গড়ে তুলেন ওপেন সিক্রেট ইয়াবার বিশাল সিন্ডিকেট। এলাকায় এখন তিনি ‘ইয়াবা সম্রাট’ নামে পরিচিত। ইয়াবা কারবারে নামার পর থেকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। অল্প সময়ে কোটিপতি হবার স্বপ্নে সে নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন অপরাধীর তালিকায়।
অনুসন্ধ্যানে জানা যায়, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর চোঁখে ধুলো দিয়ে এলাকায় গড়ে তুলেছেন নিষিদ্ধ ইয়াবার সাম্রাজ্য। শামীম এখন পূর্ব ভুরুলিয়ার শীর্ষ পর্যায়ের ইয়াবা ডিলার। অনেকে তাঁকে বলেন থাকেন ‘ইয়াবা সম্রাট’। শুধু আব্দুল আজিজই নয়, কক্সবাজার, টেকনাফ ও গাজীপুর জেলার বড় বড় মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তার নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে।
বিগত ৫ বছরে দিনে দিনে চোখের পলকে ‘আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ’ হয়ে উঠলেও এই ধনাঢ্য ইয়াবা ব্যবসায়ী শামীম ছিলো বরাবরই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চোঁখের আড়ালে। কখনো ব্লু কালার, কখনো বা কালো কালারের সুজুকি ব্র্যান্ডের গাজীপুর-ল-১১-২৫৪৩ সিরিয়ালের দামী জিক্সার মোটরসাইকেল নিয়ে চলাফেরা করেন ‘রাজার হালতে’।
ইয়াবা ব্যবসা করে রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে যাওয়ায় এলাকায় শামীমকে নিয়ে শুরু হয়েছে নানা গুঞ্জন। এলাকার সাধারণ নাগরিকরা শামীমের এ আকষ্মিক পরিবর্তনের রহস্য নিয়ে চিন্তিত হলেও পিছনে ইয়াবা ও মাদকের নগদ বাণিজ্যকেই মূলধন কিংবা উপাদান হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। অত্যন্ত সুচতুর শামীম এখনো প্রকাশ্যে ইয়াবা ব্যবসা করে বর্তমানে অর্ধশত কোটি টাকার মালিক। তবে সে নিজেকে একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরী করার দাবী করলেও সেই চাকরী গত ৫ বছর আগে ছেড়ে দিয়ে এখন তার নেপথ্যে রয়েছে মূলত ইয়াবা ব্যবসা। শামীম ছাড়াও এই ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে তার পরিবারের অনেকের সম্পৃক্ততা থাকার কথা বলছে খোদ এলাকার মানুষ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পূর্ব ভুরুলিয়া এলাকার কয়েকজন ব্যাক্তির সাথে আলাপচারিতায় উঠে আসে শামীমের উত্থানের কাহিনী। যা সিনেমার গল্পকেও হার মানায়। কেউ কেউ বলছেন, ইয়াবা ব্যবসা করে অর্ধশত কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়ায় জায়গা কিনে বাড়ি করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন শামীম। সচেতন মহলের অভিমত, অতিদ্রুত শামীমের মাদকের সিন্ডিকেট ভেঙ্গে ফেলা জরুরী। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, মাঠপর্যায়ের কয়েকজন খুচরা মাদক বিক্রেতাদের সাথে কথা বললে তারা জানান, ২৫ নং ওয়ার্ডের পূর্ব ভুরুলিয়া, বন্যপাড়া, চাপুলিয়া,পাজুলিয়া এলাকাসহ আরো বেশ কয়েকটি এলাকায় ইয়াবা ব্যবসা একাই নিয়ন্ত্রন করে আসছে শামীম। তবে এলাকাবাসীর অভিযোগ, পুলিশ প্রশাসনকে ম্যানেজ করে প্রকাশ্যে ইয়াবা ব্যবসা করে বীরদর্পে ঘুরে বেড়াচ্ছেন শামীম। যে কারণে গ্রেপ্তার হচ্ছে না শামীম। আর বন্ধও হচ্ছেনা এখানকার ইয়াবা ব্যবসা।
২০১৪ সালে ১১ জুন সন্ত্রাস, অপরাধ দমন ও মাদকের বিরুদ্ধে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে অনুপ্রানীত বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহন করেন। এ লক্ষে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, পুলিশ ও র্যাব প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে। আিইন শৃংখলা বাহিনীর নিয়মিত অভিযানে সারাদেশে অপরাধ কমে গেলেও রয়ে গেছে মাদকের রমরমা ব্যবসা। মাদক ব্যবসা যে করে, সে যে দলেরই হোক না কেন তাকে কোন রকম ছাড় দেয়া হবে না বলে সংসদে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। মাদকের বিরুদ্ধে প্রশাসনের জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করার পরও কোন এক অদৃশ্য শক্তির গুনে বহাল তরিয়তে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে শামীম।
এ বিষয়ে র্যাব, জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর, পুলিশ প্রশাসন ও মহানগর গোয়েন্দা সংস্থা (ডিবি’র) হস্তক্ষেপ চেয়েছেন এলাকাবাসী। কেননা শামীমের বাড়ির আশেপাশে মাঝরাতে অপরিচিত নামীদামি গাড়ি ও মোটর সাইকেলের সন্দেহাতীত চলাচল বেড়েছে। তা পর্যবেক্ষণ করে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করলে শামীমের মাদক ব্যবসা কমবে বলে ধারণা করেন তারা এবং ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচবে যুবসমাজ।
শামীমের বিরুদ্ধে আরো তথ্য নির্ভর সংবাদ প্রকাশের লক্ষ্যে আমাদের ক্রাইম টিউব টীম ব্যাপক অনুসন্ধ্যানে নেমেছে। এ বিষয়ে জিএমপি’র সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ রফিকুল ইসলামের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, মাদক ব্যবসায়ীদের কোন প্রকার ছাড় নেই। আমি দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছি। আসছে আরো বিস্তারীত। এসব বিষয়ের সংবাদ প্রকাশে ক্রাইম টিউব টীম সোচ্ছার।