স্ত্রীকে হত্যা করে স্বামীর ভারত পলায়ন!

স্ত্রীকে হত্যা

বুধবার শ্রীপুর থানার সামনে মেয়ের হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবিতে অভিযোগ দায়ের করতে এসে থানার সামনে কথাগুলো বলে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন ময়মনসিংহের গৌরীপুরের দৌলতপুর গ্রামের সুনীল চন্দ্র পাল।

‘আমার মেয়েকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। তার গলা কাটা, হাতের আঙুল কাটা। তাকে জবাই করে হত্যা করা হয়েছে। আমার মেয়ে তো কোনো দোষ করে নাই, তাকে কেন মেরে ফেলল। মেয়ের হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের ফাঁসি চাই, ফাঁসি চাই।’

 

তিনি জানান, তার মেয়ে স্মৃতি রানী পালকে (২৪) গাজীপুরের শ্রীপুরের বরমী কামারপাড়া এলাকায় সোমবার রাতে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। বাসায় গিয়ে দেখা যায় আরেক হৃদয়বিদারক দৃশ্য, সন্তানকে হারিয়ে বারবার সংজ্ঞাহীন হয়ে যান তার মা ঊষা রাণী পাল। তিনি বারবার বকে যাচ্ছেন- আমার মেয়েকে ফিরিয়ে দাও, তোমরা স্মৃতিকে কোথায় রেখেছ তাকে এনে দাও, আমার বুকে এনে দাও। মায়ের এমন আহাজারিতে কেউ চোখের পানি ধরে রাখতে পারছিল না।

 

নিহতের পরিবার সূত্রে জানায়, প্রায় ৩ বছর পূর্বে শ্রীপুরের কেওয়া পশ্চিমখন্ডের বাসিন্দা কেসব সরকারের পুত্র কাব্য সরকারের সঙ্গে বিবাহ হয়। দাম্পত্য জীবনে ১৮ মাসের সিয়াম নামের একটি শিশু সন্তান রয়েছে। সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে তার মেয়ে তাকে ফোনে জানায়, কালীপূজার জন্য মেয়ের জামাতা কাব্য সরকার রাত সাড়ে ৮টায় ভারতের উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে রওনা হয়েছে। নাতি সিয়ামকে নিয়ে তার মেয়ে শুয়ে আছে। পরে রাত ১০টার দিকে কাব্য সরকার ফোনে তার শ্বশুরকে জানায়- স্মৃতি পালের কি যেন হয়েছে শ্রীপুর হাসপাতালে যেতে। সেখানে তার বাবা গিয়ে দেখতে পান মেয়ের গলাকাটা নিথর দেহ হাসপাতালের বেডে পড়ে আছে। ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলাকাটা, ডান হাতের আঙুলের মাঝামাঝি গভীর কাটা জখম রয়েছে।

 

প্রতিবেশী ও বাড়ির লোকজন জানায়, সোমবার সন্ধ্যা ৭টা থেকে ৮টার মধ্যে স্মৃতির স্বামী কাব্য ভারতের উদ্দেশে বাড়ি থেকে বের হন। আর বাড়ির দক্ষিণ ভিটির ঘরে কাব্যের নানি ও মামি ঘুমিয়ে ছিলেন। পাশের কক্ষে ঘুমিয়ে ছিলেন মানসিক ভারসাম্যহীন মামা। মামাতো বোন অপস্বরা পড়ছিল পাশের ঘরে। হঠাৎ স্মৃতির চিৎকার শুনে ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন তারা। পরে তাদের চিৎকার শুনে ছুটে আসে বাজারের লোকজন। এ সময় স্মৃতিকে রক্তাক্ত অবস্থায় বারান্দায় পড়ে থাকতে দেখেন তারা।

 

পরে উপস্থিত প্রতিবেশী ও উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুমন জানান, রাত অনুমান সাড়ে ৯টার দিকে ওই বাড়িতে হঠাৎ চিৎকার শুনে বাড়ির ভেতর যাই। বারান্দায় স্মৃতিকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখি। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে বরমী বাজারের একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাই। কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

 

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. সুদেব চক্রবর্তী জানান, রাত ১০টা ৪০ মিনিটের সময় স্মৃতিকে হাসপাতালে আনা হয়। এর আগেই তার মৃত্যু হয়। নিহতের ঘাড়ে ধারালো অস্ত্রের কোপের চিহ্ন রয়েছে। এছাড়া ডান হাতের কব্জির কাছাকাছি পর্যন্ত কাটা ছিল। খবর দিলে পুলিশ এসে মরদেহ উদ্ধার করে।

 

শ্রীপুর মডেল থানার ওসি মো. জয়নাল আবেদীন মণ্ডল সাংবাদিকদের জানান, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ওই নারীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে একটি রক্তমাখা ধারালো নতুন দা, এক জোড়া স্যান্ডেল উদ্ধার করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে কাজ করছে পুলিশ।

 

এ ঘটনায় শ্রীপুর থানায় নিহতের বাবা সুনীল চন্দ্র পাল বাদী হয়ে বুধবার মামলা দায়ের করেন। ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে নিহতের স্বামী কাব্য সরকার (২৬), তার মামা নিমাই সন্ন্যাসী (৫৫) ও মামী বেলী সরকারকে (৪০) গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

 

মামলা ও গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন শ্রীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (অপারেশন) নয়ন কর। তিনি জানান, গ্রেফতারকৃত আসামীদের ৫দিনের রিমান্ড চেয়ে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।