পোস্ট অফিসে সঞ্চয় -এর ৫৫ কোটি টাকা উধাও

পোস্ট অফিসে সঞ্চয়

পোস্ট অফিসে পরিবারের সারাজীবনের সঞ্চয়ের (পোস্ট অফিসে সঞ্চয়) দুই লাখ টাকা জমা রাখেন রাজশাহীর তানোর উপজেলার পারুল বেগম। কয়েকমাস পর সেই টাকার হদিস না পেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা চালান তিনি। বিষয়টি আলোচনায় এলে সারাদেশে এমন আর কোনো ঘটনা আছে কি না, তা তদন্তের নির্দেশ দেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।

 

প্রতিমন্ত্রীর নির্দেশে তদন্তে নামে ডাক অধিদপ্তর। এরপর বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। সারাদেশের বিভিন্ন পোস্ট অফিস থেকে একই ভাবে ৫৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন কয়েকজন পোস্টমাস্টার। সঞ্চয়ের টাকা খুঁইয়ে সর্বস্বান্ত অনেক পরিবার। গতকাল রোববার ডাক অধিদপ্তরের এক সভায় প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এ তথ্য তুলে ধরেন। ‘রাজশাহীর তানোর পোস্ট অফিসে গ্রাহকদের টাকা আত্মসাতের ঘটনায় করণীয়’ সংক্রান্ত বৈঠক তদন্তে উঠে আসা এসব তথ্য জানান তিনি।

জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, তদন্ত অনুযায়ী পারুল বেগমসহ ৫১ জনের কাছ থেকে ১ কোটি ৮৪ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন অভিযুক্ত তানোরের পোস্টমাস্টার মোকসেদ আলম। এছাড়া চট্টগ্রাম জিপিওতে ২৯ কোটি টাকা, নোয়াখালী পোস্ট অফিসে সাড়ে ৯ কোটি টাকা, বরিশাল মেডিকেল কলেজ পোস্ট অফিসে ২ কোটি ও পটুয়াখালী পোস্ট অফিসে ২ কোটি, যশোরে ১ কোটি ৮৪ লাখ, শ্যামপুর পোস্ট অফিসে ৭৩ লাখ, দিনাজপুর পোস্ট অফিসে সঞ্চয়পত্রের ১২ লাখ টাকা আত্মসাতের ঘটনা রয়েছে।

বৈঠকে প্রতিমন্ত্রী বলেন, তানোর ডিজিটাল পোস্ট অফিসের পোস্টমাস্টার মোকসেদ আলীকে পুলিশে সোপর্দ করা হবে। পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে অধিকতর তদন্ত ও আইনগত ব্যবস্থা নিতে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগ করা হবে। আর পারুল বেগমসহ যাদের টাকা খোয়া গেছে, তা ফেরত দেওয়া হবে।
বৈঠকে উপস্থিত ডাক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) তরুণ কান্তি সিকদারকে দুই ঘণ্টার মধ্যে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দুদকে নালিশ দেওয়ার নির্দেশনাও দেন প্রতিমন্ত্রী। একই সঙ্গে গ্রাহক সচেতনতায় সারাদেশের ৯ হাজার ৩০০ পোস্ট অফিস এলাকায় এ বিষয়ে মাইকিং করা এবং সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে গ্রাহককে জাতীয় হটলাইন ৩৩৩ নম্বরে অভিযোগ জানাতে পরামর্শ দেন তিনি।
পোস্টের সব সমস্যার স্থায়ী সমাধানে এটুআই ও বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের (বিসিসি) সঙ্গে কথা বলে কোর ব্যাংকিং সফটওয়্যার তৈরির পরামর্শ দিয়ে জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, পোস্টাল রিসোর্স প্ল্যানিং (পিআরপি) সফটওয়্যারের মাধ্যমে পুরো কার্যক্রম কাগজ-কলমহীন ব্যবস্থাপনায় নিয়ে আসতে হবে, যেন অস্বচ্ছ কোনো প্রক্রিয়া না হয়। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে এ পিআরপি সফটওয়্যারের প্রস্তাবনা চেয়ে আগামী সপ্তাহে জমা দিতে হবে। এজন্য যদি ১০ কোটি টাকা খরচও হয়, তার মাধ্যমে ১০০ কোটি টাকার অনিয়ম-দুর্নীতি ঠেকানো সম্ভব হবে।

প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ডাক বিভাগে ৪০ হাজার কর্মীর মধ্যে হয়তো ৪০ জন অসৎ হতে পারে। তাদের জন্য পুরো বিভাগ দুর্নামের ভাগিদার যেন না হয়, সেজন্য সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। এখনই দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া হলে ডাক বিভাগের গ্রহণযোগ্যতা কমে যাবে। সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।