বিচারককে লক্ষ্য করে জুতা নিক্ষেপ করলেন বাদী

জুতা নিক্ষেপ করলেন বাদী

নিউজ ডেস্ক : পঞ্চগড় আদালতে একটি হত্যা মামলার আসামিদের জামিন মঞ্জুর করায় ক্ষিপ্ত হয়ে বিচারককে লক্ষ্য করে জুতা নিক্ষেপ করেছেন মামলার বাদী। গতকাল সোমবার দুপুরে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত পঞ্চগড়-১ এ এই ঘটনা ঘটে। বিচারককে জুতা নিক্ষেপকারী মিনারা আক্তার (২৫) নামে ওই নারীকে আটক করে পুলিশ।

 

আইনজীবী ও বাদীর স্বজনরা জানান, গত ৫ ডিসেম্বর পঞ্চগড় সদর উপজেলার সাতমেরা ইউনিয়নের ডাঙ্গাপাড়া গ্রামে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে ছোট ভাই আব্দুল মমিনের (৬৫) কিলঘুষিতে বড় ভাই ইয়াকুব আলী (৮৩) মারা যান। এ ঘটনায় ওই দিন রাতেই নিহত ইয়াকুব আলীর মেয়ে মিনারা আক্তার বাদী হয়ে পঞ্চগড় সদর থানায় ১৯ জনকে আসামি করে মামলা করেন। ওই মামলায় গতকাল দুপুরে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত পঞ্চগড়-১ এ ১৯ জন আসামির মধ্যে ১৬ জন আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করেন।

 

আদালতের বিচারক অলরাম কার্জি শুনানি শেষে সব আসামিকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিনের আদেশ দিলে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন বাদী। এ ঘটনায় আদালতে হট্টগোল শুরু হয়। এ সময় বাদী মিনারা আক্তার ক্ষিপ্ত হয়ে বিচারকের উদ্দেশ্যে জুতা নিক্ষেপ করেন। তাৎক্ষণিক পুলিশ আদালত থেকে মিনারা বেগমকে আটক করে হেফাজতে নেয়। পরিবেশ থমথমে হয়ে উঠলে আদালতের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় দুই ঘণ্টা পর আবার আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়।

 

মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী হাবিবুল ইসলাম হাবিব বলেন, ‘কয়েক দিন আগে বাদীর বাবা মারা গেছেন। আজ (সোমবার) তাদের বাড়িতে কুলখানি হচ্ছে। এ অবস্থায় একটি হত্যা মামলায় জামিনের জন্য আবেদন করা সব আসামিকে জামিন দেওয়া কোনোভাবেই কাম্য নয়। বিচারকের এমন আদেশে আমরা আদালত ত্যাগ করে চলে এসেছি। ৩০২ ধারার অজামিনযোগ্য একটি হত্যা মামলার আসামিদের কীভাবে কেন জামিন দিল? এটা বোঝা যাচ্ছে না। হত্যাকাণ্ডের ৭ দিনের মাথায় আসামিরা জামিন পায় আইনজীবী হিসেবে এটা আমরা কখনো দেখিনি।’

 

তবে আসামিপক্ষের আইনজীবী রাকিবুত তারেক বলেন, ‘আসামিদের আগামী ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দিয়েছে আদালত। আর মামলার যারা মূল আসামি তারা আত্মসমর্পণ করেনি। যারা আত্মসমর্পণ করেছে তাদের অধিকাংশই ছিল নারী। এছাড়া আসামিদের বক্তব্য ছিল ওই ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়নি, তিনি হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন। আর যেহেতু মামলার জব্দ তালিকায় এবং সুরতহাল রিপোর্টের নথিতে এই তথ্য নেই তাই হয়তো সার্বিক দিক বিবেচনা করে আদালত তাদের জামিন দিয়েছে।’

 

আদালতে পুলিশের সাধারণ নিবন্ধন শাখার (জিআরও) পরিদর্শক মো. জামাল হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, মিনারা আক্তার আদালত পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন। আদালতের সিদ্ধান্ত পেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মিনার বেগমকে পাঁচ হাজার টাকা মুচলেকায় জামিন দেয়া হয়েছে।

 

এ বিষয়ে জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুল বারী বলেন, ‘আদালত চলাকালে একটি অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার খবর শুনেছি। এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে কেউ এ বিষয়ে (জুতা নিক্ষেপ করলেন বাদী) কোনো অভিযোগ করেনি। যার কারণে সমিতির পক্ষ থেকে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি।’

Related Post:
চট্টগ্রাম আদালতে বিচারককে জুতা ছুড়ে মারলেন আসামি