নিউজ ডেস্ক : গাজীপুরের কালীগঞ্জে এক যুবককে তুলে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর ও ছাত্রলীগের এক নেতার বিরুদ্ধে। কালীগঞ্জে কাউন্সিলরের নেতৃত্বে যুবককে হত্যা-চেষ্টা । এ ঘটনার বিচার চেয়ে থানায় গিয়ে মুক্তিযোদ্ধা বাবাসহ লাঞ্চনার শিকার হয়েছেন ভুক্তভোগী ওই যুবক।
বুধবার এ সংক্রান্ত বিষয়ে গাজীপুরের স্থানীয় একটি পত্রিকার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে ভুক্তভোগীর বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা মোসলেহ উদ্দিন ভূঁইয়া ও তার পরিবারের সদস্যরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট উক্ত ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক ন্যায় বিচার দাবি করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে কাউন্সিলরের নেতৃত্বে যুবককে হত্যা-চেষ্টা ‘র লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন কালীগঞ্জের ওই ভুক্তভোগী যুবক মোহাম্মদ রায়হান শরীফ। এসময় উপস্থিত ছিলেন তার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা মোসলেহ উদ্দিন ভূঁইয়া ও তার সহধর্মিনী জান্নাতুল নাঈমসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা।
বক্তব্যে রায়হান শরীফ জানান, গত ১৫ অক্টোবর দুপুরে তিনি কালীগঞ্জ বাজারে সোনালী ব্যাংকের নিচে একটি কম্পিউটারের দোকানে বসেছিলেন। তখন স্থানীয় কালীগঞ্জ পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আশরাফুল আলম রিপনের অনুসারী সুজন সুকুমার ও ফয়সাল আহমেদ সরকার নামে দুই যুবক ফোনে আরো ৮-১০ জনকে ডেকে আনে।
পরে তারা রায়হানকে জোড়পূর্বক মটরসাইকেলে তুলে কাউন্সিলর রিপনের কার্যালয়ে নিয়ে বেধড়ক মারপিট করে এবং তার মোবাইল ছিনিয়ে নেয়। পরে আবার সেখান থেকে কাউন্সিলর রিপনের নির্দেশে রায়হানকে হত্যার উদ্দেশে কালীগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীর পাড়ে নির্জন শ্মশান ঘাটে নেওয়া হয়। সেখানে তাকে কাঠ ও রড দিয়ে উপর্যুপরি পেটাতে থাকে। এক পর্যায়ে ফোনে যুক্ত থাকা কালীগঞ্জ শ্রমিক কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি এম আই লিকনের নির্দেশে রায়হানের হাত পা বেঁধে মাঝ নদীতে ফেলে দেওয়ার জন্য ট্রলারে তোলা হয়। এসময় স্থানীয় এক সংবাদকর্মী বিষয়টি টের পেয়ে ঘটনাস্থলে হাজির হলে রায়হান প্রাণে রক্ষা পান।
তিনি অভিযোগে আরও জানান, ওই সাংবাদকর্মীর হস্তক্ষেপে প্রাণে বাঁচলেও তাকে পুনরায় ওই কাউন্সিলরের কার্যালয়ে নিয়ে স্বীকারোক্তিমূলক ভিডিও এবং ফাঁকা স্ট্যাম্পে রায়হানের স্বাক্ষর নেওয়া হয়। পরে তাকে আবার তুলে কালীগঞ্জ থানায় নেওয়া হয়। সংবাদ পেয়ে রায়হানের মুক্তিযোদ্ধা বাবা থানায় যান।
মুক্তিযোদ্ধা মোসলেহউদ্দিন ভূঁইয়া অভিযোগ করেন, তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দেওয়ার পরও ওসি আনিসুর রহমান তাকে চেয়ারে বসতে দেয়নি। এমনকি তার সামনে ছেলেকে বিভিন্ন অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন ওসি আনিসুর রহমান। এক পর্যায়ে সাদা কাগজে মুক্তিযোদ্ধা মোসলেহ উদ্দিনের স্বাক্ষর রেখে তাদের থানা থেকে বের করে দেয় ওসি।
থানা থেকে ছাড়া পেলে রাত ৮টার দিকে গুরুতর আহতাবস্থায় কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয় রায়হানকে। কিন্তু হামলাকারীরা ওই হাসপাতালে গিয়ে মহড়া দেওয়ায় ভয়ে গাজীপুরের একটি প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি হয়। বর্তমানে রায়হান শরীরের বিভিন্ন স্থানে রক্তজমাট ও ক্ষত চিহ্ন নিয়ে চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছেন।
উল্লেখিত বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধা মোসলেহ উদ্দিন ভূঁইয়া বাদী হয়ে গত ১৫ অক্টোবর কালীগঞ্জ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করলেও এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মামলা গ্রহণ করেনি ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।
সংবাদ সম্মেলনে রায়হানের উত্থাপিত অভিযোগের বিষয়ে কাউন্সিলর আশরাফুল আলম রিপন বলেন, রায়হান মিথ্যাবাদী। সে বিভিন্ন সময়ে মানুষের ব্যক্তিগত বিষয়ে ফেসবুকে লেখালেখি করে। তাকে কেউ মারেনি, সে এক্সিডেন্ট করে ব্যাথা পেয়েছে।
কালীগঞ্জ শ্রমিক কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি এম আই লিকন রায়হানকে পেটানোর বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, রায়হান শিবির কর্মী। সে বিভিন্ন সময়ে সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনা করে থাকে। কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনিসুর রহমান বলেন, মুক্তিযোদ্ধাকে নয়, তার ছেলে রায়হানকে বের করে দেওয়া হয়েছিল। অন্যান্য অভিযোগের বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না বলে দাবী করেন।
Related Post:
ফারইষ্ট লাইফের ৬০ কোটি টাকা আত্মসাত -এর মামলায় জেলহাজতে সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল